অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : হজযাত্রীদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কেনা জাহাজ হিজবুল বাহারকে জিয়াউর রহমান প্রমোদতরী বানিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে ‘পবিত্র হজ কার্যক্রম-২০২৩’ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
‘সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু) হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী প্রেরণ করেন। দুঃখের বিষয়, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরী বানিয়েছিলেন।’
‘বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং সাহায্য প্রেরণ করেন। তাঁর কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন।’ ‘বঙ্গবন্ধুই প্রথম আইন করে মদ, ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন’ উল্লেখ করে বলেন, ‘যে মদের লাইসেন্স বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়েছিলেন তা জিয়ার আমলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা ইসলামের নামে স্বার্থন্বেষী মহলের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এক ঐতিহাসিক বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করীম (সা.) এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’
এসময় হজ পালনে অতীতে দুর্ভোগ, অব্যবস্থাপনা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হজযাত্রীদের হয়রানি, ভিসা জটিলতা, ফ্লাইট বিপর্যয় এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব ‘নিত্য-নৈমিত্তিক’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এ সমস্যা দূর করতে ই-হজ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেছি।’
বিএনপি জামায়াত আমলের সব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এর ফলে প্রতিবছর হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন, ৪৫ হাজার ৭৬৩ জন। আর এ বছর হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন।’
‘হজযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির আরও কারণ হলো আমরা বাংলাদেশকে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পেরেছি, মানুষের আয় ও জীবন-মান বৃদ্ধি পেয়েছে’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে ইসলামের নামে মানুষ হত্যা, খুন, বোমাবাজি নিত্য-নৈমত্তিক বিষয় ছিল’ বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা সেই ভীতিকর অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নেই। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র উপস্থাপনকালে গণপরিষদে প্রদত্ত ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, ২৫ বছর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যভিচার-এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে।’
‘ধর্ম একটি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গীবাদবিরোধী কর্মসূচিতে আলেম ওলামাদেরকে সম্পৃক্ত করেছি। আজ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।’
Leave a Reply