অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সমাজে প্রবীণরা প্রতিনিয়ত পারিবারিক, সামাজিক এবং নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত। প্রবীণদের সমস্যা জর্জরিত জীবনে আলোর প্রদীপ হাতে কেউ এগিয়ে আসে না। কারণ পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে তারা অপাঙ্ক্তেয় বা বলা যায়, বোঝা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। অথচ আজকের প্রবীনরাই একসময়ে ছিলেন তারুণ্যের উম্মাদনায় ভরপুর, যৌবনের চঞ্চলতায় অসুর। কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই আজ তারা বয়ো বৃদ্ধ।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে গেছে। ফলে প্রবীণ নারী-পুরুষের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশে এক কোটি ৫৩ লাখেরও বেশি প্রবীণ রয়েছেন, যা ২০২৫ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ ও ২০৫০ সালে সাড়ে চার কোটিতে পৌঁছবে। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিকস বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে এক চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং অর্ধেকেরও বেশি রয়েছেন পুষ্টিহীনতায়। বর্ধিত এ জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সরকারের কাছে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার নিুআয়ের প্রবীণদের কথা চিন্তা করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করলেও সমাজের সর্বস্তরের প্রবীণদের জন্য সর্বজনীন বয়স্কভাতা এবং অন্যান্য সামাজিক ও নাগরিক সুবিধাসহ সার্বিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে তেমন কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। শুধু তাই নয়,সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো-২০১৩ সালে প্রবীণ নীতিমালা ও পিতামাতার ভরণপোষণ আইন পাশ হলেও বিগত ১০ বছরে নীতিমালায় প্রদত্ত অধিকাংশ বিষয় আজও বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন ঘটলেও প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা প্রকৃত অর্থে হচ্ছে না। প্রবীণ বয়সে প্রবীণরা রোগে শোকে জর্জরিত হয়ে থাকেন। হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য আলাদা কোনো প্রবীণ কর্নারের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শুধু হাসপাতালেই নয়; ব্যাংক, বীমা, গণপরিবহণ, অফিস-আদালত সবখানেই প্রবীণদের একই অবস্থা।
প্রবীণবিষয়ক লেখক, গবেষক ও সংগঠক হাসান আলী বলেন, প্রবীণের মানবাধিকার রক্ষায় প্রজন্মের ভূমিকা হলো গোটা পৃথিবীতে বিরাজমান অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়নকে চ্যালেঞ্জ জানানো। আর সে কাজটি দ্রুত করাই এখন আমাদের দায়িত্ব।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষনা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড.তৌহিদুল হক মনে করে করেন, বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশের মধ্যেই প্রবীণদের সম্মান দেখানোর ব্যাপারে আন্তরিকতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। এ বৃদ্ধ বয়সে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক শক্তি কোনোটাই প্রবীণদের নেই। সরকার প্রবীণদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসাবে ঘোষণা করলেও প্রবীণদের কোথাও অর্থ ছাড় বা মূল্যহ্রাস করা হয় না। আর্থিক দৈন্যদশার মধ্যেই তাদের জীবন অতিবাহিত করতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তক বা পাঠ্যসূচিতে সিনিয়র সিটিজেন/বয়োজ্যেষ্ঠদের কীভাবে সেবাযত্ন বা সেবা প্রদান করতে হবে, সে সম্পর্কে এখন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে বলে জানা নেই। তাই এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার আহবান এই সমাজ বিজ্ঞানীর।
Leave a Reply