17 May 2024, 09:46 am

লাখ লাখ আফগান নাগরিক অনাহারের মুখোমুখি ; অথচ তাদের ৭ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে আমেরিকার ব্যাংকে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আফগানিস্তানের অর্থনীতি রীতিমত ধসে পড়েছে এবং জাতিসংঘ বলছে, সেখানে লাখ লাখ মানুষ এখন অনাহারের মুখোমুখি। আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছেন, দেশটিতে যে তীব্র অর্থনৈতিক এবং খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, সেখানে মানুষ এখন মরিয়া হয়ে বাঁচার জন্য নিজের মেয়েকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। শিশু সন্তানদের খাবার দিতে না পেরে ওষুধ খাইয়ে নির্জীব করে রাখছেন অনেকে।

বহু বছরের যুদ্ধ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুহারা হাজার হাজার মানুষ থাকে হেরাতের ঠিক বাইরে। অর্থনীতি ধসে পড়ার পর আরও একটি শীত এসেছে। এখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে তীব্র ক্ষুধার গল্প রয়েছে।

আবদুল রাহাব নামের একজন বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদে। তখন তাদেরকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই। ওরা মরে গেলেই ভালো।’এমন কাজ কি অন্যরাও করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, অনেকেই এমন কাজ করে।

গোলাম হযরত নামের এক ব্যক্তির কাছে এমন ট্যাবলেট ছিল। সেগুলো মূলত ট্র্যাংকুলাইজার। অনেকে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধও বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সেখানকার বাজারে এক টুকরো রুটির টাকা দিয়ে এমন পাঁচটি ট্যাবলেট পাওয়া যায়।

গোলাম বলেন, তিনি তার এক বছর বয়সি শিশুকে এই ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। ক্ষুধা আমাদের সব সম্মান কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি ১২০০ ডলারের (এক লাখ ২০ হাজার টাকা প্রায়) বিনিময়ে আমার পাঁচ বছরের মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছি। ’

নিজামউদ্দিন নামের এক দিনমজুর জানান, ‘আমি কিশোর ছেলেকে অবৈধভাবে কাজ করতে ইরানে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার ছোট ছেলেরা প্রতিদিন আবর্জনা কুড়ায়। আমাদের কিছু করার নেই। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবো?’

চার বছরের নাজিয়া থাকে পাশের বাড়িতে। কান্দাহারের এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তার বাবা হযরতউল্লাহ জানান, খাওয়াতে পারছিলেন না। তাই তিনি এই কাজ করেছেন। নাজিয়ার ১৪ বছর বয়স হলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সব টাকা খরচ করেছি খাবার কিনতে এবং ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে।’

ছেলের প্রতি ইশারা করে নাজিয়ার বাবা বলেন, ‘ওকে দেখুন। অপুষ্টিতে ভুগছে, চিকিৎসা দরকার। যদি অন্য কোনো পথ থাকতো তাহলে মেয়েকে বিক্রি করতাম না।’

এমন সব নিষ্ঠুর গল্প সেখানে প্রতি ঘরে ঘরে। বিবিসির প্রতিবেদক বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি, শুনেছি। তাতে বোঝা যাচ্ছে এখানে একটি বিপর্যয় ঘটেছে। ক্ষুধা একটি নিঃশব্দ ঘাতক। এটার প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু এই বিপর্যয়ের ফল হয়তো কখনোই জানা যাবে না। কারণ এর হিসেব কেউ রাখে না।’

হেরাতের এসব মানুষ মনে করে, আফগানিস্তানের সরকার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়, সবাই তাদের পরিত্যাগ করেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অর্ধেকের বেশি মানুষকে বাঁচাতে সেখানে জরুরি সাহায্য দরকার। লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। অথচ আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংকে আফগানিস্তানের ৭ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। কিন্ত সে অর্থ আমেরিকান সরকার আফগানিস্তানকে প্রদান করছে না। যা একান্তই অমানবিক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5543
  • Total Visits: 738196
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1126

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ ইং
  • ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ৮ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৯:৪৬

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018